গতকাল বুধবার বিকেলে নীলফামারীর ডোমার উপজেলা পরিষদের মাঠে আয়োজিত পথসভায় জামায়াত আমির এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘৫ তারিখের (আগস্ট) পর আমাদের কর্মীরা বেপরোয়া হয়ে সমাজে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেনি। অথচ সবচেয়ে মজলুম, বড় মজলুম দল হচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আমরা এখানে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছি, ইনশাআল্লাহ দেশ গড়ার ক্ষেত্রেও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেব।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা গর্বিত উত্তরবঙ্গের মানুষ। এখন সন্তানেরা যে স্লোগান দেয় প্রথম নামটি আপনাদের আবু সাঈদের। আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ। আবু সাঈদের নামটাই আগে আসে। অনেকে আবার শহিদদের নিজের দলের দাবি করেন। শহিদেরা জাতীয় সম্পদ, আমরা দলের ভিত্তিতে তাদের ভাগ করতে চাই না। এদের আমরা মাথার ওপর উঠিয়ে রাখতে চাই। আমরাই একমাত্র দল, আল্লাহর শুকরিয়া, প্রত্যেকটি শহিদ পরিবারে আমরা গিয়ে পৌঁছেছি এবং তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। আমরা শহিদদের নিয়ে রাজনীতি করতে চাই না। শহিদদের আমরা মাথার তাজ বানিয়ে রাখতে চাই। লড়াইয়ের ময়দানে আবারও দেখা হবে ইনশা আল্লাহ। সেই সব লড়াই হবে মানুষের মুক্তির লড়াই, মানবিক বাংলাদেশ গড়ার লড়াই।’
জামায়াতের আমির বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদগুলো আওয়ামী লীগের ছিল। জোর করে ভাই-ভাতিজা, শালা-সম্বন্ধী মিলে দখল করেছিল। এরা এখন পালিয়ে গেছে। মেম্বাররা পালিয়ে গেছে। চেয়ারম্যান নাই, মেম্বার নাই, মানুষ যাবে কেন? এতগুলো মানুষের দায়িত্ব প্রশাসক নেবে? যাদের জনগণ নিজেদের প্রতিনিধি মনে করে না। পৌরসভা ভেঙে দেওয়া হয়েছে, সিটি করপোরেশন ভেঙে দেওয়া হয়েছে, সেখানে কোনো জনপ্রতিনিধি নেই। জেলা ও উপজেলা পরিষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে, সেখানে কোনো জনপ্রতিনিধি নেই। প্রতিদিন মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে। আমাদের রাজনীতি জনগণের দুর্ভোগ বাড়ানোর জন্য নয়, আমাদের রাজনীতি দুর্ভোগ কমানোর জন্য।’
ডা. শফিক বলেন, ‘এ অবস্থায় যদি বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হয়, আমার কাছে সাংবাদিক বন্ধুরা জানতে চেয়েছিলেন, “আপনি কী মনে করেন?”, আমি বলেছিলাম, ইট উইল বি দ্য জেনোসাইড অব ইলেকশন। একটা ইলেকশনকে একদম খতম করে দেবে। চরম বিশৃঙ্খলা হবে, রক্তের বন্যায় বাংলাদেশ ভেসে যাবে। আমরা এটা চাই না, আমরা চাই সকল ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করে, দেশে আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে জনগণকে স্বস্তির সঙ্গে তার ভোট প্রয়োগের সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।’
জামায়াত আমির আরও বলেন, ‘গত সাড়ে ১৫ বছরে যারা নতুন ভোটার হয়েছে, তাদের প্রত্যেককে ভোটার লিস্টে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আওয়ামী লীগ যে পৌনে ২ কোটি ফলস ভোটার তৈরি করে গিয়েছিল, তাদের কেটে সাফ করতে হবে। যারা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন, তাদের বাদ দিতে হবে। এবারকার এই আন্দোলনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা সারা দুনিয়ায় আমাদের সঙ্গে আন্দোলন করেছেন, তাদের প্রত্যেকের ভোট নিশ্চিত করতে হবে। এ কাজগুলো করেই একটা সুষ্ঠু নির্বাচনে যেতে হবে। তবে দৈনন্দিন জীবনে মানুষকে কিছু আইনগত কিছু প্রশাসনিক সহায়তা দিতে হবে।’
ডা. শফিক বলেন, ‘বিভিন্ন আসনে যখন মনোনয়ন দেওয়া হয়, তখন পেশিশক্তি আর কালো টাকার বলে ভোটকে প্রভাবিত করে অযোগ্য সন্ত্রাসীরা অনেক টাকায় নির্বাচিত হয়ে আসে। সংসদে একজন মহিলা গিয়েছেন। তিনি কিছুই পড়তে পারেন না, বলতে পারেন না। তার মেয়ে এক পৃষ্ঠা কাগজ লিখে দিয়ে বলেছে, “আম্মা, তুমি এইটা বলিও-এইটা বলিও, এইটা বললে হবে।” তিনি দাঁড়িয়ে কাঁপছেন, ১৭ মিনিটে এক পৃষ্ঠা পড়েছেন, এক পৃষ্ঠার মধ্যে ২৮টা ভুল পড়েছেন। একজন সংসদ সদস্যের কাজ দেশের আইন রচনা করা। এখন বলেন, এ রকম লোকেরা যদি সংসদ সদস্য হন, তারা কি দেশের ভালো আইন তৈরি করার যোগ্যতা রাখেন? রাখেন না বলেই তো কালো আইনের কবলে পড়ে আমরা শেষ হয়ে যাচ্ছি।’
দেশে বেকারদের বিষয়ে জামায়াতের শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘কেন তারা বেকার থাকে, তার অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটা হলো সুশিক্ষার পরিবর্তে কুশিক্ষা। এ শিক্ষা মানুষকে মানুষ বানায় না, এই শিক্ষা যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে না। এ জন্য সার্টিফিকেটের বস্তা নিয়ে এক অফিস থেকে আরেক অফিসে দৌড়াতে হয়। আমরা যুব সমাজকে কথা দিচ্ছি, আল্লাহ যদি এই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব আমাদের দেন, ইনশা আল্লাহ নৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি পেশাগত দক্ষ শিক্ষা তোমাদের হাতে এমনভাবে তুলে দেওয়া হবে, যেদিন তোমাদের শিক্ষার পাঠ শেষ হবে, সেই দিন তোমাদের হাতে যেমন সার্টিফিকেট আসবে, তেমনি চাকরির অফার লেটারও চলে আসবে। আমরা একটা বেকারের হাত থাকতে দেব না।