মেহেন্দিগঞ্জ প্রতিনিধি ।।
পাতারহাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৪৩ ইং সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টি উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় পর্যায়ে এমনকি দেশের সেরা প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে ঘোষিত হয় ১৯৯৫ সালে। প্রতিষ্ঠা লগ্নের পর থেকেই বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে প্রতিবছরই পাশের হারে কোন না কোন পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করে নিয়েছে এই বিদ্যালয়টি। প্রায় ১৩ শত শিক্ষার্থী নিয়ে বর্তমানে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২১ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও ২০ জন শিক্ষক পাঠ দান করে যাচ্ছেন নিয়মিত। এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন যারা দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়ন করেছেন এবং করছেন। এদের মাঝে কেউ কেউ সচিব, যুগ্ন সচিব, উপসচিব পদমর্যাদায় এখন অবধি চাকুরীরতও রয়েছেন।
শিক্ষার মানে উচ্চতর পর্যায়ে অবস্থান করা এই বিদ্যালয়ের অভিভাবক এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে মানহীন অপেক্ষাকৃত স্বল্প মেধা সম্পন্ন এক শিক্ষকের যোগদান কে কেন্দ্র করে। তথ্যসূত্রে জানা যায়, পদ্মা রানী নামে একজন সহকারী শিক্ষক কয়েকদিন আগে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলা থেকে ট্রান্সফার হয়ে এই বিদ্যালয়ে যোগদান করতে আসে। পদ্মা রানীর শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটে দেখা যায় তিনি এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় বি গ্রেড পেয়ে পাস করেন। এসব তথ্য প্রকাশ পেয়ে গেলে স্কুলের অভিভাবক এবং স্থানীয় বাসিন্দারা ব্যাপক ক্ষোভে ফুসে উঠেন। অভিভাবকদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন মানহীন এই শিক্ষক সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করলে তারা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করবেন। হোসনেয়ারা নামে একজন নারী অভিভাবক বলেন শিক্ষিকা নিজেই পাস করেছেন মাত্র এইচএসসি তাও আবার বি গ্রেড পেয়ে তিনি আমার বাচ্চাকে কি পড়াবেন!
সরে জমিনে তথ্য সংগ্রহে জানা যায়, ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলা থেকে আগত এই পদ্মা রানী মূলত আওয়ামী পরিবারের সন্তান। তিনি চাকুরী লাভ করেন গত আওয়ামী সরকারের আমলেই। বৈবাহিক সূত্রে তিনি মেহেন্দিগঞ্জের একটি হিন্দু পরিবারের পুত্রবধূ। মেহেন্দিগঞ্জের সাবেক সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথ ছিলেন ব্যাপক মৌলবাদী। গত আওয়ামী সরকারের আমলে পঙ্কজ দেবনাথ সংসদ সদস্য হওয়ার সুবাদে মেহেন্দিগঞ্জের অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেদের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরিতে পদায়ন করেছেন। পঙ্কজ দেবনাথ এর আপন ছোট ভাই সরোজ কুমার নাথ ঝিনাইদা জেলার সাবেক ডিসি, যুগ্ম সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, খুলনা বিভাগ হওয়ার সুবাদে প্রশাসনিক ভাবে এই পদ্মা রানী খুব সহজেই মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার পাতারহাট সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় ট্রান্সফার হওয়ার সুযোগ পান।
এ বিষয়ে জানতে স্কুল ম্যানেজিং এডহক কমিটির আহবায়ক কিরণ চন্দ্র রায় বলেন, একটি উন্নত মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে আমি অবশ্যই চাইবো আমার স্কুলে মানসম্মত সুশিক্ষিত একজন শিক্ষক নিয়োগ হোক পাশাপাশি অযোগ্য অল্প শিক্ষিত কোন শিক্ষক এসে যোগদান করে আমার এই প্রতিষ্ঠানকে কলুষিত না করুক। যদিও এই বিষয়ে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাইনুল ইসলাম বলেন, দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক ট্রান্সফারের বিষয়টি বর্তমানে অনলাইন ভিত্তিক। প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক মন্ডলী এবং এলাকাবাসীর অভিযোগ সম্পর্কে অভিহিত হয়েছেন বলে জানান এই শিক্ষা অফিসার। তিনি আরো বলেন, জেলা শিক্ষা অফিসার এবং বিভাগীয় উপ পরিচালক মহোদয়ের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে পদ্মা রানীর যোগদানের বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন।
পাতারহাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি দাতা পারভেজ খন্দকার বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটিতে আমার বাবা, চাচারা, আমি এবং আমার সন্তানরা লেখাপড়া করেছে। স্কুলের সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে আমি ইতিমধ্যেই উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলে এসেছি এই বলে যে, প্রাতিষ্ঠানিক ঐতিহ্য বিজড়িত এই স্কুলে মানহীন অল্প শিক্ষিত কোন শিক্ষককেই আমি এবং এলাকাবাসী এখানে যোগদান করতে দিব না।