নিজস্ব প্রতিবেদক // বরগুনায় জাতীয় শোক দিবসে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষ চলাকালে লাঠিপেটার ঘটনায় বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহররম আলীকে তাঁর কর্মস্থল থেকে বদলি করার পর আরও ৫ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।গতকাল মঙ্গলবার রাতে তাঁদের প্রত্যাহারের আদেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহররম আলীকে মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) কার্যালয়ে বিশেষ দায়িত্বে নিযুক্ত করার পর ওই দিনই আরেক আদেশে তাঁকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে।
বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত সোমবার বরগুনার ওই ঘটনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাই নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে মহররম আলীকে সোমবার বরিশালে এবং অপর এক আদেশে ওই দিনই চট্টগ্রাম রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে। একই সঙ্গে বরগুনা সদর থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) আরও ৫ সদস্যকে প্রত্যাহার করে অন্য জেলায় দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন- বরগুনা সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. সাগর, পুলিশ লাইনসে কর্মরত কনস্টেবল রাফিউল ইসলাম, ডিবি পুলিশের কনস্টেবল কে এম সানি। তাঁদের প্রত্যাহার করে ভোলা জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ইসমাইল হোসেন এবং কনস্টেবল রুহুল আমিনকে প্রত্যাহার করে পিরোজপুর জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলীকে প্রত্যাহার করে প্রথমে বরিশাল রেঞ্জে এবং পরে চট্টগ্রাম রেঞ্জে বদলি করা হয়।
ঘটনায়প্রকাশ গত সোমবার বরগুনায় জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জেলা ছাত্রলীগের শোক মিছিলে আরেকটি পক্ষ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালায়। জেলা শিল্পকলা একাডেমির সামনে এ ঘটনার সময় ইটপাটকেলে পুলিশের গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। এ সময় পুলিশ ছাত্রলীগের ওই পক্ষকে নিবৃত্ত করতে বেধড়ক লাঠিপেটা করে। বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সামনেই পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনা ঘটে। এ সময় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ও কর্তব্যরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহররম আলীর মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। এ ঘটনা তদন্তে সোমবার রাতেই পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এরপর সোমবার রাতে সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু একটি শোকসভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, পুলিশের উদ্দেশই ছিল মারপিট করা। এ সময় তিনি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহররম আলীকে প্রত্যাহার ও তাঁর বিচারের দাবি রাখেন। এরপর মঙ্গলবার রাতে মহররম আলীসহ দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিচার দাবিতে শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন আওয়ামী লীগ। সেখানেও সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু একই দাবি জানান। একই সঙ্গে বক্তারা জেলা ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
অপর দিকে সোমবার রাতে জেলা ছাত্রলীগ ওই হামলার ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে। সেখানে জেলা ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি রেজাউল কবির এবং সাধারণ সম্পাদক তৌশিকুর রহমান বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, পুলিশ যাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা করেছে, সেটা না করলেও আরও বড় ধরনের ঘটনা ঘটত। এ জন্য জেলা পুলিশকে ধন্যবাদও জানান তাঁরা।
দীর্ঘ আট বছর পর গত ১৭ জুলাই বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর কাউন্সিল শেষে পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা ঢাকায় যান। এরপর সেসব জীবনবৃত্তান্ত যাচাই করে গত ২৪ জুলাই রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জেলা ছাত্রলীগের ৩৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা দেন। এর পর থেকেই সদ্য ঘোষিত এ কমিটি প্রত্যাখ্যান এবং তাদের প্রতিহত করার ঘোষণা দেয় পদবঞ্চিত একটি পক্ষ। পদবঞ্চিত পক্ষটি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী। এ নিয়ে কয়েক দফা সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে।
Leave a Reply