নিজস্ব প্রতিবেদক
চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়িয়েছেন বরিশাল-পটুয়াখালী বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সিংহভাগ সদস্যরা। একইসাথে সেবামুলক এ প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের সাংগঠনিক বিধি অনুযায়ী যথাযথ্য ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে দাঁতভাঙ্গা জবাব দিবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
গতকাল রোববার ( ২৪ নভেম্বর) রুপাতলীস্থ পটুয়াখালী সড়কে সমিতি’র অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় মুক্ত মতামতে প্রায় ৭৫ জন বাস মালিক সমিতি’র সদস্যরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় কার্যকরী সিদ্ধান্ত গ্রহণে ঐক্যমত পোষণ করেন তারা। পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সভার শুরু হয়। এসময় গীতা পাঠও করা হয়।
অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় গত তিনমাস পুর্বে গঠিত আহবায়ক কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমিতি পরিচালনায় কেন্দ্রীয় ও সাংগঠনিক সব নীতি অনুসরণ করে গঠন ও অনুমোদন প্রাপ্তিপুর্বক ২১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন। এর মধ্যে ১৮ জনকে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়। বাকি ৩ জনের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ থাকায় শপথের আওতাভুক্ত করা হয়নি। এদিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সভাপতি হিসেবে মনোনীত হন মোঃ জিয়াউদ্দিন সিকদার। তিনি আহবায়ক কমিটির আহবায়ক হিসেবে দুরদর্শীতার সাথে দায়িত্ব পালনে সক্রিয় ছিলেন। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে প্রকৌশলী মোঃ আনোয়ার হোসেনকে। এর আগে আওয়ামী সরকার পতনের পর সমিতি পরিচালনায় স্থবিরতা দেখা দেয়ায় নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়।
আর ওই ক্রান্তিলগ্নে সব মালিকদের যৌথ অনুরোধে সমিতি’র হাল ধরেন জিয়াউদ্দিন সিকদার। তিনি মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব । ইতিপুর্বে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত নিজের ইতিবাচক দক্ষতার পরিচয় দিয়ে এই মালিক সমিতিকে উন্নতীর শীর্ষ চুড়ায় পৌছে দিয়েছিলেন। কিন্ত বিগত বছরে তা ঢেকে যায় নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছ্বাচারিতার দাপটে। আর সমিতি যখন নেতৃত্বশুন্য হয়ে পড়ে তখন আবারও সব মালিকরা সমিতি’র উন্নয়নে নেতৃত্বের দায়িত্বভার জিয়াউদ্দিন সিকদারের ওপর অর্পণ করেন।
এদিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটিকে সিংহভাগ সদস্যরা সাধুবাদ ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমিতি’র উন্নয়নে কাজ করার অঙ্গীকারাবদ্ধও হয়েছেন তারা। একইসাথে ব্যবসা ও সেবামুলক এ প্রতিষ্ঠানটিকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মুক্ত রেখে ব্যবসার প্রসারে গুরুত্বারোপ করেছেন তারা। সকলের মুক্ত মতামত প্রকাশের মধ্য দিয়ে এ সমিতি স্বৈরচারমুক্ত ও স্বাধীন সমিতি বলেও আখ্যায়িত করেছেন। ইতিবাচক এসবের কৃতিত্বেরভার তুলে দিয়েছেন জিয়াউদ্দিন সিকদারকে।
তারা জানিয়েছেন, জিয়াউদ্দিন সিকদার দায়িত্বগ্রহণের পর থেকেই মালিক সমিতিতে আবারও শৃঙ্খলা ফিরেছে। দীর্ঘদিনের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছেন বলেও জানান তারা। ব্যবসার উন্নতির পাশাপাশি পুর্বের সন্মান ফিরে পেয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন সব মালিক সদস্যরা। আর এ সন্মান ও শৃঙ্খলাকে অক্ষুন্ন রাখতে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমিতি’র বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের কঠোরহস্তে দমন করবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। কমিটির ১ নং কার্যনির্বাহী সদস্য মোঃ মহিউদ্দিন সরদার জানান, এ প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসা ও সেবামুলক। এখানে কোন রাজনীতির সুযোগ নেই। আমার লক্ষ যাত্রী সেবা ও ব্যবসার। আমরা ব্যবসা করতে এসেছি । রাজনীতি নয়। বর্তমানে আমাদের ব্যবসার প্রসার ঘটেছে।
উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ-মুহুর্তে কেউ যদি সমিতিকে নিয়ে অপপ্রচার কিংবা ষড়যন্ত্র চালায় আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেটিকে প্রতিরোধ করবো। ৫ আগস্টের পর প্রথমে আহবায়ক কমিটি এখন মুল কমিটিতে রুপ নিয়েছে। এ সমিতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন আমাদের জিয়াউদ্দিন সিকদার ভাই। ক্রান্তিলগ্নে তিনি হাল ধরেছেন। তিনি অত্যন্ত সুদক্ষ ও দুরদর্শী একজন ব্যক্তি। তার হাত ধরে ইতিপুর্বে এ সমিতি অনেক দূর এগিয়েছিল।
আবারও আমাদের অনুরোধে তিনি সমিতিতে দায়িত্ব নিয়েছেন। এজন্য আমরা তাকে শুভেচ্ছা জানাই। ঐক্যবদ্ধ থেকে আমরা তাকে সহায়তার মধ্য দিয়ে সমিতি ও নিজেদের ব্যবসার উন্নয়নে কাজ করে যাব। কোন অপশক্তিতে প্রবেশ কিংবা ছাড় দেয়া হবে না। কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত লাইন সম্পাদক ও নলছিটি উপজেলার ২ নং মগড় ইউনিয়নের যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক তানজির রহমান ফয়সাল জানান, আমাদের ইতিবাচক কার্যক্রমকে প্রশবিদ্ধে নানা মহল অপকৌশল অবলম্বন করে যাচ্ছে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থেকে এদের প্রতিরোধ করবো। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের কোন দোসর কিংবা বহিরাগত কেউ সমিতি’র ক্ষতিসাধণে প্রচেষ্টা চালালে আমরা দাঁতভাঙ্গা জবাব দেব। কমিটি’র সহ-সভাপতি মোশারফ হোসেন সান্টু বলেন, এ সমিতি’র প্রত্যেক মালিক সদস্য তারা প্রকৃত সন্মান ফিরে পেয়েছেন। ব্যবসার প্রসার ঘটেছে। শৃঙ্খলা ফিরেছে সমিতিতে । যার কৃতিত্ব জিয়াউদ্দিন সিকদার ভাইকে দিতেই হবে। কেননা তারা দায়িত্বশীল ও দুরদর্শীতা সমিতি উন্নয়নে ভুমিকা রাখছে । আমরা উজ্জীবিত হয়েছি। আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। এ-মুহুর্তে কিছু বহিরাগত আওয়ামী লীগের দোসর মিলে মালিক সমিতির ইতিবাচক কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধে পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের হুঁশিয়ারি একটাই, কোন ব্যক্তি সে হোক আমাদের সমিতি’র কিংবা বহিরাগত সমিতির ক্ষতিসাধনের চেষ্টা চালালে আমরা ঐক্যবদ্ধ অবস্থা থেকে তার প্রতিরোধ করবো। এসময় সান্টু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাস মালিক সমিতিকে নিয়ে আওয়ামী লীগের দোসর এর মধ্যে বহিরাগত টিটুসহ কিছু ব্যক্তি অপ-প্রচারে লিপ্ত রয়েছে। তারা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের কাছে এর প্রমাণ আছে। এদের বিষয়ে আমাদের সতর্ক ও প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সমিতির কেউ ক্ষতিসাধণ কিংবা অপ-প্রচার করলে ছাড় নয়।
সাধারণ বাস মালিক সমিতি’র সদস্যরা মুক্ত মতামতে স্বস্তির সাথে বক্তব্য রাখেন। একই সাথে কিছু অসাধু ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের নাম প্রকাশ করে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তারা জানান, বর্তমানে তিনজন ব্যক্তি মালিক সমিতি’র ক্ষতিসাধনে লিপ্ত রয়েছে। নানা মহলে অহেতুক সব মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছেন।
মুলত তারা আওয়ামী লীগের সময়ে অবৈধ ফায়দা লুটতো। এখন শৃঙ্খলা ও পরিচ্ছন্নতা ফেরায় তাতে ভাটা পড়েছে। এতে ইতিবাচক ও বিতর্কমুক্ত এ কার্যক্রম তাদের মনপুত হচ্ছেনা। ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলে ব্যর্থ হয়ে নানামুখী অপ-তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছেন তারা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ নাসির মৃধা , মান্নান ও বহিরাগত শ্রমিক নেতা পরিচয়ে টিটু রয়েছে। যার মুলত আওয়ামী লীগের দোসর হয়ে এর আগে ব্যপক অনিয়ম ও ফায়দা লুটেছিলেন। আর এখন তাতে পরিচ্ছন্ন নেতৃত্বের কারনে প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে।
এজন্যই তারা বিভিন্নজনের দ্বারস্থ হয়ে মালিক সমিতির ক্ষতিতে সক্রিয় রয়েছে। যার সব প্রমান আমাদের হাতে এসেছে। আমাদের স্পস্ট কথা , যে ব্যক্তি মালিক সমিতির বিরুদ্ধে অহেতুক অপ-প্রচার চালাবে কিংবা ক্ষতিসাধণের চেস্টা করবে আমরা তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাংগঠনিক বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্বশীলদের হস্তক্ষেপ কামনা করবো। কোন ছাড় দেয়া হবে না।
এদিকে সাধারণ সভায় বাস মালিক সদস্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন নুরুল ইসলাম, সৌরভ হাসান, সালাম মৃধা , ফিরোজ আলম মিয়া, আনোয়ার হোসেন, হারুন অর রশিদ খান প্রমুখ। তারা সকলেই সমিতি’র পূর্ণাঙ্গ কমিটিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ঐক্যবদ্ধ থেকে সকল অপশক্তিতে মোকাবেলায় অঙ্গীকারাবদ্ধ হন।
কমিটির সভাপতি জিয়াউদ্দিন সিকদার জানান- এ সমিতি সম্পুর্ন ব্যবসা ও সেবামুলক একটি প্রতিষ্ঠান। সমিতির উন্নয়নে সকলে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবো। আপনাদের (সব বাস মালিক সদস্য) সু-চিন্তিত মতামতের ভিত্তিতে সব কার্যাদি বাস্তবায়িত হবে। আমরা চাই যাত্রী সেবার উন্নয়ন, ব্যবসার প্রসার, সুশৃঙ্খল একটি মালিক সমিতি। এ লক্ষ্যে সকলকে কাধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যেতে হবে। কোন ষড়যন্ত্রকারীদের সুযোগ দেয়া হবেনা। আমাদের এ ইতিবাচক কার্যক্রম যাতে থমকে না যায় এজন্য সকলকে সজাগ থাকতে হবে। সকলের ঐক্যবদ্ধতায় আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারবো। এসময় তিনি সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।