1. faysal.rakib2020@gmail.com : admin :
  2. ukbanglatv21@gmail.com : Kawsar Ahmed : Kawsar Ahmed
ছুটি নিয়ে উধাও প্রাথমিকের ৪৫১ শিক্ষক - বাংলার কন্ঠস্বর ।। Banglar Konthosor
রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:১১ পূর্বাহ্ন

ছুটি নিয়ে উধাও প্রাথমিকের ৪৫১ শিক্ষক

  • প্রকাশিত :প্রকাশিত : বুধবার, ৫ অক্টোবর, ২০২২
  • ১২২ 0 বার সংবাদি দেখেছে

ঢাকা বিভাগের শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যা উপজেলার ৩৭ নম্বর সিড্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাজনীন আক্তার। ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই চিকিৎসার জন্য ছুটির আবেদন করেন। এর পর কেটে গেছে সাড়ে চার বছর। এখন পর্যন্ত তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। নাজনীন আক্তার আসলে কতটা অসুস্থ সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জনের মাধ্যমে দুই দফায় বোর্ড গঠন করে তাকে ডাকা হয়। সেখানে উপস্থিত হননি তিনি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শোকজ দিলে উত্তর দেননি তারও। পরে স্বজনরা জানিয়েছেন তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন।

শুধু নাজনীন আক্তার নন, তার মতো সারাদেশের ৪১০ জন সহকারী শিক্ষক ও ৪১ জন প্রধান শিক্ষক অনুমোদন ছাড়া দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তাদের অনুপস্থিতিতে বিদ্যালয়গুলোতে কোনোমতে শিশুদের পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, নাজনীন আক্তার সাড়ে চার বছর ধরে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হচ্ছেন না। মস্তিষ্ক বিকৃতির কারণ দেখিয়ে চিকিৎসার জন্য তিনি ২০১৭ সালে ছুটির আবেদন করেন। আবেদন করেই উধাও হয়ে যান। দায়িত্বরত মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা তার সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও হদিস মেলেনি।

জানতে চাইলে ডামুড্যার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দিন বলেন, শিক্ষকদের অনুপস্থিতির তালিকা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) থেকে চাওয়ায় সহকারী শিক্ষক নাজনীন আক্তারের সঙ্গে বাসস্থান ও মোবাইল নম্বরে বারবার যোগাযোগ করেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। কয়েক মাস আগে তার এক আত্মীয় এসে কিছু মেডিকেল কাগজ দিয়ে গেলে আমরা জেলা সার্জনের মাধ্যমে বোর্ড গঠন করে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও পাইনি।

তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে একাধিকবার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে তিনি দেশে না বিদেশে সেটিও কেউ বলতে পারছেন না। বর্তমানে ওই শিক্ষকের বেতন-ভাতা সুবিধা বন্ধ রাখা হয়েছে।

মেডিকেল ছুটি নিয়েছিলেন ঢাকার গুলশানের আমতলী স্টাফ ওয়েলফেয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাসিনা আক্তার ইভা। গত বছরের ২৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। এরপর থেকে তার সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে। বিভাগীয় মামলা পরিচালনায় দ্বিতীয় দফায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।

তৎকালীন ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলেয়া আক্তার শিখা বলেন, হাসিনা আক্তার ১৫ দিনের মেডিকেল ছুটি নেওয়ার পর থেকে তার আর খোঁজ মেলেনি। এরপর তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাকে একাধিকবার চিঠি ও শোকজ দেওয়ার পরও কোনো উত্তর না দেওয়ায় বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। চাকরিবিধি লঙ্ঘন করায় তাকে চাকরিচ্যুত করা হতে পারে।

২০১৬ সালের ১২ জুলাই থেকে রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার লাখেরাজটারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছাম্মদ নাজমা খাতুন এখন পর্যন্ত অনুপস্থিত। ছুটি নিয়ে আমেরিকায় আত্মীয়ের বাড়িতে গেলে আর দেশে ফেরেননি তিনি।

এ বিষয়ে রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাজাহান সিদ্দিক বলেন, নাজমা খাতুন সাড়ে ছয় বছর ধরে নিজ কর্মস্থলে অনুপস্থিত। বর্তমানে তিনি দেশের বাইরে আছেন। সে কারণে দফায় দফায় তাকে তলব করলেও তিনি উত্তর দেননি। প্রথম দফায় এই শিক্ষককে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে অনুপস্থিতির জবাব চাওয়া হয়। এরপর ব্যক্তিগত শুনানির জন্য তাকে ডাকা হলেও উত্তর পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, আমরা এ শিক্ষকের আত্মীয়স্বজনের কাছে খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পেরেছি তিনি বিদেশে আছেন। সে কারণে সরকারি চাকরি শৃঙ্খলা আপিল বিধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। সেটি বর্তমানে চলমান। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তাকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।

ডিপিই থেকে জানা যায়, বিভিন্ন অজুহাতে ছুটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন উপজেলার ৪৫১ বিদ্যালয়ে কর্মরত ৪১০ জন সহকারী শিক্ষক, ৪১ জন প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্বে ৫ জন) বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। তার মধ্যে অধিকাংশ নারী শিক্ষক। কেউ মেডিকেল ছুটি, কেউ বিদেশ ভ্রমণ, উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ সফরসহ নানা কারণে ছুটি নেন তারা। নির্ধারিত ছুটি শেষ হওয়ার পর তারা আর কর্মস্থলে উপস্থিত হননি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিভিন্ন সময় এসব শিক্ষকের ঠিকানায় তাদের অনুপস্থিতির কারণ জানতে চিঠি ও শোকজ দেওয়া হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায় না। যারা বিদেশে আছেন তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। সে কারণে অনুপস্থিত থাকা অধিকাংশ শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে। কারও কারও বিরুদ্ধে প্রক্রিয়া চলমান। ধাপে ধাপে এসব শিক্ষককে চাকরিচ্যুতসহ বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হতে পারে।

শাস্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, বিভাগীয় মামলার পরিপ্রেক্ষিতে অপরাধের ওপর ভিত্তি করে কারও লঘু কারও গুরুদণ্ড হতে পারে। যেমন- বেতন স্কেল কমানো, পদাবনমন, সাময়িক বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক অবসর (যাদের চাকরি ২৫ বছর হয়েছে) কিংবা স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুতি।

তারা আরও জানান, অনেক উপজেলায় শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকলেও সেখানের দায়িত্বরত মাঠ কর্মকর্তারা গুরুত্ব দেননি। বিষয়টি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানোর কথা থাকলেও তা জানানো হয়নি। বিষয়টি ডিপিই এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নজরে এলে সারাদেশে অনুপস্থিত থাকা শিক্ষকদের তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর সবাই নড়েচড়ে বসেন। এ কারণে শিক্ষকদের বিদেশে উচ্চ ডিগ্রির জন্য ভ্রমণ বাতিল করা হয়েছে।

এসব বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, দেশের বিভিন্ন উপজেলায় ৪১০ জন সহকারী শিক্ষক ও ৪১ জন প্রধান শিক্ষক ছুটি শেষে দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত হচ্ছেন না বলে আমাদের কাছে তালিকা এসেছে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। যারা অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকবেন তাদের মতো শিক্ষক আমাদের প্রয়োজন নেই।

তিনি আরও বলেন, শুধু শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সেসব মাঠ কর্মকর্তারা এ সংক্রান্ত তথ্য পাঠাননি তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের চিহ্নিত করে শোকজ দিতে ডিপিইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সবার বিরুদ্ধে চাকরিবিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষক অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে দ্রুতসময়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

‍এই ক্যাটাগরির ‍আরো সংবাদ