নিজস্ব প্রতিবেদক
বরিশাল-পটুয়াখালী বাস মিনিবাস মালিক সমিতির কার্যালয়ে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল (১২ ডিসেম্বর) রুপাতলীস্থ পটুয়াখালী সড়কে সমিতির কার্যালয়ে আনুমানিক সকাল ৭টা সকাল ১০ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় সমিতি’র ক্ষয়ক্ষতি, কাগজপত্র ও সিটি ফুটেজ বিশ্লেষণ শেষে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছেন সমিতি সংশ্লিষ্টরা।
তবে হঠাত দুর্ধর্ষ ঘটনাকে নিছক চুরি বলছেন না মালিক সমিতির সাধারণ সদস্যরা। তাদের অভিমত, সমিতি’র গুরুত্বপুর্ন কাগজপত্রাধি গায়েব ও কার্যক্রম বিঘ্নিতে অসাধু এক চক্রের অপ-কৌশলের অংশ হতে পারে এটি। কারন হিসেবে তারা জানিয়েছেন, ৫ আগস্টের পর নবগঠিত কমিটি সমিতি পরিচালনায় যথাযথ ও ইতিবাচকের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছে। মুক্ত হয়েছে চাঁদাবাজি। সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হচ্ছে কার্যক্রম। আর এটি ব্যহতেই মালামাল তছরুপসহ ক্ষয়ক্ষতির উদ্দেশ্যে ঘটানো হয়েছে এমন নেতিবাচক ঘটনা।
ঘটনা অবহিতের পর থেকেই সমিতিজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা ভিন্নমত। অধিকাংশই ধারণা করছেন চুরি নয় বরং ফায়দা লুটতে ব্যর্থ হয়ে পুর্বপরিকল্পিতভাবে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন অসাধুরা।
মালিক সমিতি’র পিয়ন সুলতান জানিয়েছেন, রাত ১০ টার পর থেকে সমিতিতে প্রবেশের মুল ফটক অত্যাধুনিক গেইট দিয়ে তালাবদ্ধ করা হয়। সমিতি’র কার্যালয় তৃতীয় তলায়। নিচের দুই ফ্লোরে সুন্দরবন কুরিয়ারের কার্যালয় ও ২য় তলায় রয়েছে একটি রেস্ট্রুরেন্ট। আর সকালে গেইট খুলে দেয়া হয়। চোরচক্র ভোর ৭ টা থেকে ১০ টার মধ্যে প্রবেশ করেছে। কারন ঐ একটি মাত্র গেইট দিয়ে সমিতিতে প্রবেশ পথ। সকাল আনুমানিক ৮ টার দিকে এই ভবনের মালিক নুরু মিয়া আমাকে ফোন করে জানান, সমিতি’র কার্যালয় থেকে পানি পড়তেছে।
সুলতান জানান, আমি খবর পেয়ে কার্যালয়ে যেতেই তৃতীয় তলায় সমিতি’র অভ্যন্তরে প্রবেশের পার্শ্বে থাইগ্লাস ওপর থেকে কর্তন করা ও খোলা রয়েছে। ভিতরে ঢুকতেই নজরে পড়ে বাথরুমের সামনে বেসিন ও কলের দিকে । বেসিন ও কল চোর খুলে নিয়ে গেছে চোরচক্র। সমিতি’র হলরুমে প্রবেশেই আলমিরা ও ফাইল কেবিনেট এর খোলা । আর ভাঙ্গাও হয়েছে। আর এতেই সন্ধেহের মাত্রা তীব্র হয়েছে। এরপর পরই দেখি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ব্যক্তিগত ড্রয়ার খোলা। এসবের মধ্যে থাকা সব কাগজপত্রই এলোমেলো ও তছরুপ করেছে চোরচক্র।
সুলতান জানান, এমন দৃশ্য চোখে পরার পর সংশ্লিস্ট সকলকে অবহিত করি। রাতে সমিতিতে প্রবেশের সুযোগ নেই। চোর মুলত সকালে গেইট খোলার পরপরই প্রবেশ করেছে। আর তার উদ্দেশ্য চুরি নয় কাগজপত্র তছরুপই ছিল প্রধান লক্ষ বলে বলে হচ্ছে।
এদিকে সমিতি সংশ্লিস্টরা বলছেন, এর আগে মালিক সমিতিতে চুরি সংঘটিত হয়নি। ৫ আগস্টের পর মালিক সমিতি পরিচালনায় নতুন কমিটি গঠিত হয়। আর এ কমিটির কার্যক্রমে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। মুলত সুশৃঙ্খলা ও সব বিতর্ক মুক্ত এ কমিটি। আর এতেই যেন ফোসকা পড়েছে স্বার্থান্বেসী মহলের। যারা মুলত স্বৈরাচারি আওয়ামী লীগের দোসর। আওয়ামী লীগের সময়ে সমিতি’র নাম বিক্রি করে ব্যাপক চাঁদাবাজি ও স্বার্থ হাসিল করেছে ঐ মহলটি। এর ধারাবাহিকতায় কিছুদিন পুর্বেও সমিতি’র বিরুদ্ধে নানা মাধ্যমে অহেতুক অভিযোগ দিয়েছে। সত্যতা না থাকায় তা ঢোপে টেকেনি।
সদস্যদের ঐক্যবদ্ধতায় নস্যাৎ হয়েছে সব ষড়যন্ত্র। মালিক সদস্যরা আরও জানান, তবুও খ্যন্ত হয়নি ঐ আওয়ামী লীগের দোসররা। একেরপর নানা অপ-কৌশল এঁটে যাচ্ছেন। চুরির ঘটনা এরই অংশবিশেষ। কারণ তারা জানেন, সমিতিতে কোন কাগজপত্র গুরুত্বপুর্ণ। আর সেটিই তছরুপ করতে এ চোরচক্রকে এবার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করলেন। আমরা অবিলম্বে এদের চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হাতে তুলে দিব।
এদিকে ঘটনার পরপরই সমিতি’র কার্যালয় পরিদর্শন করেছেন কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ। সাথে ছিলেন সমিতি’র সভাপতি মোঃ জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া। মুলত চুরি সংঘটিতের পর থানা পুলিশকে অবহিত করেছেন তারা।
এ বিষয়ে সমিতি’র সভাপতি মোঃ জিয়াউদ্দিন সিকদার জানান, বিষয়টি নিছক চুরি নয় বলে মনে হচ্ছে। দরজা ভেঙ্গে সমিতি’র ভিতরে প্রবেশ করেছে চোর চক্র। ভিতরের মালামাল এমনভাবে ভাঙচুর ও তল্লাশি করেছে তাতে দেখলে যে কেউই মনে করবে তাদের লক্ষ্য অর্থ হাতানো নয়, তাদের লক্ষ্য ছিল সমিতি’র গুরত্বপুর্ণ ডকুমেন্টস ও কাগজপত্র হাতানো।
কারণ সমিতি’র বিরদ্ধে কিছু কুচক্রী মহল রয়েছে যারা আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দোসর হিসেবে পরিচিত। সমিতি’র কার্যক্রম ব্যহত ও মালিকদের ব্যবসায় ক্ষতিসাধনে এমন অপচেষ্টার অংশ হতে পারে এটি। আমরা নিশ্চিত এজন্যই এমন পাঁয়তারা চালিয়েছে। সমিতি’র নিচ তলায় সিটি ফুটেজ রয়েছে ,আমরাও বিশ্লেষণ করছি। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকেও অপরাধীদের শনাক্তে অনুরোধ জানাচ্ছি।
সমিতি’র দায়িত্বপ্রাপ্তদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তারা দেখছেন। কোন ডকুমেন্ট কিংবা কাগজপত্র মিসিং আছে কিনা।
এ বিষয়ে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মিজানুর রহমান জানান, ঘটনাস্থলে খবর পেয়ে পুলিশ সদস্যরা পরিদর্শন করেছেন। লিখিত অভিযোগ আসেনি। পরবর্তী চুরি কিংবা অন্য কোন ঘটনা থাকলে যাচাই-বাছাই পুর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।