নিজস্ব প্রতিবেদক // প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর রক্ষাকবচ বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে দুই হাজার ৮৯ কোটি টাকার প্রকল্পের আওতায় বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চরদোয়ানী এলাকায় এই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে মাটির পরিবর্তে বালু ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। তথ্যসূত্র: দৈনিক যুগান্তর।
জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বরগুনার পাথরঘাটায় ২০১৭ সালে ৪০/২ পোল্ডারের ৩৪.২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করে চায়নার চংকিং ইন্টারন্যাশনাল কনস্ট্রাকশন করপোরেশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে ব্যয় ধরা হয় ১২৮ কোটি ৯ লাখ টাকা।
কোটি টাকার এ প্রকল্পে মাটির বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে বালু। প্রতিষ্ঠানটি পাথরঘাটা উপজেলার চার ইউনিয়নের অভ্যন্তরে ২৪.২ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে ১৭টি স্লুইসগেট নির্মাণ করে। কাজ শুরু থেকে ঠিকাদার সংশ্লিষ্টরা মাটির পরিবর্তে বাঁধের পাশ থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে স্লুইসগেটসহ বাঁধ নির্মাণকাজ অব্যাহত রেখেছে। যার ফলে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচিত পাউবোর বাঁধটির স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উপকূলীয় জনগোষ্ঠী।
স্থানীয়রা জানান, এই বেড়িবাঁধ আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই বাঁধ নির্মিত হচ্ছে বালু দিয়ে। এতে আমাদের কোনো উপকার হবে না।
নিয়মবহির্ভূত এমন কাজ বন্ধে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বরগুনা জেলা প্রশাসন। তবু থামেনি তাদের বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ। তবে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পটুয়াখালী সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক কাইছার আলম সাংবাদিকদের বলেন, একাধিকবার কাজ বন্ধে নির্দেশ দিয়েছি আমরা। তবু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্থানীয় অসাধু প্রভাবশালীদের সহায়তায় বালু দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজটি করে যাচ্ছে।
দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের কনসালটেশন সুপারভিশন ইঞ্জিনিয়ার মো. হারুন অর রশিদ বলেন, বেড়িবাঁধ নির্মাণে বালু ব্যবহার করার কোনো সুযোগ নেই। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়নার চংকিং ইন্টারন্যাশনাল কনস্ট্রাকশন করপোরেশন খামখেয়ালি করে যত্রতত্র গর্ত করে বালু ব্যবহার করছে। এ বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানিয়েছি।
পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির জানান, বেড়িবাঁধ নির্মাণে চায়নার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিকো বালু ব্যবহার করছে। এ জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বহুবার অবহিত করেছি। কিন্তু কেউ কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বালু দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হলে, তা হবে আমাদের জন্য একটা মরণফাঁদ।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড জেলা প্রশাসনকে সিডিউলবহির্ভূত কাজের কথা অবহিত করেছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমাদের কথা মানছে না। আমি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।
Leave a Reply