ডেক্স রিপোর্ট // স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্সরা দেড় ঘন্টা ধরে ভর্তিকৃত এক বছর বয়সী এক শিশুর হাতে ক্যানোলা পুশ করতে না পারায় মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের। এর আগে প্রথমে ওই শিশুটিকে হাতে ক্যানোলা পড়াতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইমারজেন্সি রুমে নিয়ে যায় অভিভাবকরা। সেখানে দায়িত্বরত মেডিকেল এ্যাসিট্যান্ট না থাকায় আধা ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয় তাদের। অবশেষে শিশুটির হাতে ক্যানোলা পুশ করতে না পারায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয় শিশুটির।
এই নির্মম ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাত ১০ টায় ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরা ৫০ শয্যা হাসপাতালে।
মৃত শিশুটি হলেন, উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের চরযতিন গ্রামের বাসিন্দা আমির হোসেনের এক বছরের শিশু পুত্র মো. আবদুল্লাহ।
এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাতজুড়ে মৃত শিশুটির স্বজনদের সাথে হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তাদের হট্রগোল শুরু হয়। তখন ওই শিশুটির স্বজনরা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে মৃত শিশুর স্বজন, স্থানীয় চেয়ারম্যান, চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় করে পরিস্থিতি শান্ত করে।
তবে শনিবার ভোর থেকে এই নির্মম ঘটনা পুরো দ্বীপে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা ধিক্কার জানানোর পাশাপাশি সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে বিচারের দাবী তোলেন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন অনিয়ম সহ সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে এর বিচারের দাবীতে পোস্ট দেন।
এদিকে শিশুটির চাচা মাওলানা রিয়াজ দেড় ঘন্টা ধরে ক্যানোলা পড়াতে না পারায় শিশুটির মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করে ঘটনার বর্ননা দেন।
তিনি জানান, শুক্রবার রাত ৮ টায় ভাতিজা আবদুল্লাহ ঠান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসে ডা. আশিকুর রহমানকে দেখান। তিনি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে যাবতীয় ওষুধের প্রেসক্রিপশন করে হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। এবং ক্যানোলা পুশ করে দ্রুত ওষুধ প্রয়োগ করতে বলেন।
কিন্তু ক্যানোলা হাতে পুশ করতে ঘটে অঘটন। প্রথমে শিশুটিকে নিয়ে ইমারজেন্সি রুমে দায়িত্বরত কেউ না থাকায় সেখানে আধা ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। পরে শিশুটিকে হাসপাতালের দোতলার দায়িত্বরত নার্সদের রুমে নিয়ে গেলে ঘটে বিপত্তি। দেড় ঘন্টা ধরেও দায়িত্বরত নার্সরা ওই শিশুর হাতে ক্যানোলা পড়াতে পারেননি। পরে ভাতিজার মৃত্যু হয়।
হাসপাতালে ভর্তিরত রোগি ও স্বজনরা জানান, এই হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাসপাতালে অনুপস্থিত দীর্ঘ দিন। যে যার মতো কাজ করছেন। এতে তারা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানান তাঁরা। ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাসে এক দিন আসেন বলে জানান রোগিরা। ভর্তিকৃত রোগি, হাসপাতালের অবস্থারত কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে এর সত্যতা পাওয়া যায়।
এই ব্যাপারে মনপুরা উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তৈয়বুর রহমান অনুপস্থিত থাকায় ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকা আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আশিকুর রহমান জানান, জ্বর ও ঠান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ায় শিশুটির শরীরে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ক্যানোলা পড়াতে পারেনি নার্সরা। এতে ওষুধ প্রয়োগ করতে না পারায় শিশুটির মৃত্যু হয়।
এই ব্যাপারে মনপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইদ আহমেদ জানান, শিশু মৃত্যু নিয়ে রাতে হাসপাতালে হট্রগোল শুরু হলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। তবে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেনি।
Leave a Reply