গাজী আরিফুর রহমান, বরিশাল।।

বরিশাল সদর উপজেলার ৩ নং চরবাড়িয়া ইউনিয়নের ২ নং ( মুকুন্দপট্টি ) ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা মো. ইমরান হোসেন সোহাগের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ইটসলিংয়ের রাস্তা নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

নিম্নমানের ইট ব্যাবহার, সঠিক পরিমাণ বালু না দিয়ে কাঁদার ওপর ইট বিছিয়ে সম্পন্ন করা হচ্ছে সরকারি রাস্তার কাজ। এতে এ রাস্তার স্থায়িত্ব নিয়েও চরম হতাশা প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।

বরিশাল সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন ( পিআইও ) কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (কাবিখা) কর্মসূচি (অর্থবছর ২০২৪-২০২৫) এর আওতায় উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের মুকুন্দপট্টি গ্রামের সুলতান খানের বাড়ির দক্ষিণ পাশ থেকে উত্তর দিকে ৭২০ মিটার ইটসলিং রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে ৩ লাখ ৭৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যে প্রকল্প কমিটির সভাপতি ইউপি সদস্য মোঃ ইমরান হোসেন সোহাগ।

সরজমিনে গিয়েও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। নিম্নমানের ইট ব্যাবহার ও সঠিক পরিমাণ বালু না দিয়ে কাঁদার ওপর ইট বিছিয়ে কাজ করতে দেখা গেছে নির্মাণ কর্মীদের।

এসময় স্থানীয় বাসিন্দা মো. রিপন বলেন, “এই রাস্তা নির্মাণ কাজে যদি ভালো ইট ব্যাবহারের কথা থাকে তাহলে এই নিম্নমানের ইট দেয়া হবে কেন? যদি কাজের মান ভালো না হয় তাহলে মানুষের ভোগান্তি লাগব হবে না।”

মো. সাজিদ হোসেন বলেন, “বিগত দিনে এই রাস্তার অবস্থা অনেক খারাপ ছিল যখন বৃষ্টি নামতো তখন প্রচুর পরিমাণে কাদা হত। আমরা হাঁটাচলা করতে পারতাম না। এখন রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে একদম বাজে ইট ও ময়লা আবর্জনা যুক্ত বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। এভাবে কাজ করা ঠিক নয়। এরকম কাজ করা হলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রাস্তা আবার ভেঙেচুরে বাজে অবস্থায় পরিণত হবে। নিম্নমানের কাজের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।”

স্থানীয় বাসিন্দা মো. সিয়াম বলেন, “দীর্ঘদিনের ভোগান্তির পরে রাস্তাটির ইটসলিং এর কাজ শুরু হয়েছে। রাস্তাটি ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ চলাচল করে। বাজেটের তুলনায় নিম্নমানের কাজ হওয়ায় দু-এক মাসের মধ্যেই রাস্তার অবস্থা পুনরায় খারাপ হয়ে যাবে।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দারা বলেন, “মোঃ ইমরান হোসেন সোহাগ ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মী। তিনি ( সোহাগ ) চরবাড়িয়া ইউনিয়নের ২ নং ( মুকুন্দপট্টি ) ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা। আওয়ামী লীগের ক্ষমতা বলেই বিনা ভোটে ইউপি সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এলাকায় এখনও নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে বেড়ায়। বর্তমান স্বাধীন পরিবেশেও যদি লুটতরাস মার্কা ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ কর্মীদের দিয়ে উন্নয়নমূলক কাজ করানো হয় তবে তো তারা লুটেপুটে খাবেই। একজন আওয়ামী লীগের কর্মী কিভাবে এখনো উন্নয়নমূলক প্রকল্পের সভাপতি হয় বিষয়টি আমাদের বোধগম্য নয়। রাস্তাটির নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম হলেও যেন দেখার কেউ নাই। আমরা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার সুদৃষ্টি কামনা করছি।”

রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য মো.ইমরান হোসেন সোহাগ মুঠোফোনে এই প্রতিবেদক কে বলেন, “রাস্তার কাজে অনিয়ম হয়ে থাকলে আপনি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার ( পিআইও ) কাজে গিয়ে অভিযোগ দিন। আপনি উপজেলায় গিয়ে তারসাথে যোগাযোগ করেন।”

এ বিষয়ে বরিশাল সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো.মোজাম্মেল হক বলেন, বিষয়টি আমি অবগত হওয়ার পরে প্রকল্পের সিপিসি’কে মুঠোফেনে বলেছি খারাপ ইটের ব্যাপার হলে তা পরিবর্তন করে দিতে। তিনি বলেছেন পরিবর্তন করে দিবেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার পক্ষ থেকে সরজমিনে গিয়ে রাস্তাটি নির্মাণ কাজের তদারকি করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছুদিন আগেই নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে এখন পর্যন্ত সরজমিনে তদারকি করা হয়নি।”

এবিষয়ে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও ) মো. ইকবাল হাসান এই প্রতিবেদককে বলেন, “ঘটনাটি আমি আগে জানতাম না। আপনার মাধ্যমে শুনলাম। তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।”