মোঃ ছায়েদ হোসেন, রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি // দরজায় কড়া নাড়ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আগামী ১ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উপলক্ষে রামগঞ্জের কেনাকাটার ধুম পড়েছে। অলিগলিতে এখন ক্রেতা-বিক্রেতাদের তুমুল ভিড়। প্রতিমার সাজসজ্জা থেকে শুরু করে মুকুট, শাড়ি, অলংকার, লেস, সিঁদুর, ফুলের মালা, প্রতীকী অস্ত্র ও ঘট কিনতে ব্যস্ত ক্রেতারা। ‘দুর্গাপূজা শুরু হয় মহাষষ্ঠীর কল্পারম্ভ দিয়ে। এরপর আসে বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস। পরে শুরু হয় সপ্তমীর নবপত্রিকা স্নান ও মহাস্নান, অষ্টমী পূজা, সন্ধিপূজা, নবমী পূজা ও দশমী পূজা। প্রতিটা ধাপে ধাপে কিছু নতুন নতুন উপকরণ সংযোজন হয়। তাই দুর্গাপূজার ফর্দ এত বিশাল হয়ে থাকে।’
সরেজমিন রামগঞ্জের বিভিন্ন মার্কেটে দেখা যায়, ইতোমধ্যেই পূজা উপলক্ষে রামগঞ্জে শুরু হয়েছে পূজার কেনাবেচা। শহরের বিভিন্ন মার্কেট, বিপণিবিতান ও শপিংমলে চলছে কেনাকাটা। এবার কেনাকাটায় কিছুটা ভিন্নতা লক্ষ করা গেছে। কেনাকাটায় লেগেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। ভক্তদের মাঝেও এখন উৎসবের আমেজ। উৎসবের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে বিরাজ করছে দেবীকে বরণ করে নেয়ার প্রস্তুতি। দেবীকে বরণ করে নিতে পূজায় নতুন পোশাক না হলে কি চলে! পরিবারের সবার নতুন পোশাক চাই। তাই পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন রামগঞ্জে বসবাসকারী হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে শিশু-কিশোররা নিজের পছন্দের পোশাক কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন দোকানে দোকানে। দোকানিরা ক্রেতাদের চাহিদামতো কাপড়চোপড় দোকানে তুলেছেন। ক্রেতারাও দোকানগুলোতে পাচ্ছেন তাদের পছন্দসই কাপড়। ক্রেতারা তাদের পছন্দের জামাকাপড় মোবাইলে ছবি তুলে ইমু, ভিডিও কল, হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারের মাধ্যমে পাঠাচ্ছেন তাদের স্বজনদের কাছে। স্বজনরা সেই ছবি দেখে পছন্দ করলেই তারা কাপড়চোপড় কিনে ফেলছেন।
জিয়া শপিং, নুরপ্লাজা, সিটি শপিং, জনতা টাওয়ার ও নিউমাকের্টে পূজা কেনাকাটায় করতে আসা কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, ‘পূজার মুকুট, পূজার শাড়ি, পূজার গয়না, পূজার চুড়া, শাড়িসুড়ি এইগুলা কিনতেছি। আমরা মালাসহ পূজার যা যা লাগে সবই মোটামুটি কিনতেছি। বাবা, মা, ভাই, বোন, ছেলে মেয়েদরকে পূজার উপহার দিতে ভিডিও কলের মাধ্যমে তাদেরকে কাপড়চোপড় পছন্দ করাই। তারা পছন্দ করার পর তাদের জন্য কাপড় কিনি। দোকান থেকে আমি পছন্দসই কাপড়চোপড় মোবাইলে ভিডিও কলের মাধ্যমে স্বজনদের দেখাচ্ছি। স্বজনরা সে কাপড় দেখে পছন্দ করে দেওয়ার পর তাদের পছন্দসই কাপড় কিনেছি।’ গ্রাম থেকে সবাইকে নিয়ে এসে জামাকাপড় কেনা সম্ভব নয়। তাই প্রযুক্তির কল্যাণে ভিডিও কলের মাধ্যমে যার যার পছন্দমতো জামাকাপড় কিনেছি।’
গতকাল সকালে সরেজমিনে শপিং মলগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, পোশাকের দোকানগুলোতে ভিড় বেশি। শিশুদের দোকানগুলোতে চলছে কেনাবেচা। শিশুদের পোশাকের মধ্যে রয়েছে থ্রি-কোয়ার্টার, ফোর-কোয়ার্টার প্যান্ট, গেঞ্জি, পাঞ্জাবি, ফ্রক, টপস, স্কার্টসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক। কাতান, জর্জেট, সিল্ক, শিপন ও এমব্রয়ডারি দিয়ে কাজ করা ভারতীয় শাড়ির প্রতি আগ্রহ বেশি ক্রেতাদের। কদর রয়েছে টাঙ্গাইলের তাঁত ও জামদানি শাড়িরও। ক্রেতা বুঝে যার যাই পছন্দ হোক না কেন, বেশিরভাগ ক্রেতাই আবহাওয়া উপযোগী শাড়িই কিনছেন। গরমের সময় হওয়ায় হালকা ও কম ওজনের শাড়ি বেশি বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে এবার তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে সারারা, ফ্লোরটাচ গাউন বা ব্রাইডাল গাউন, ক্যাপ গাউন, নরমাল পার্টি গাউন, লং গাউন বুটিকস, লং কামিজসহ বাহারি রং ও নানা ডিজাইনের চোখধাঁধানো পোশাক। ছেলেদের পোশাকের ক্ষেত্রে এবার পাঞ্জাবির সঙ্গে মিলিয়ে কটি বেশ চলছে। অনেকে পাঞ্জাবির সঙ্গে পরার জন্য পূজার আমেজের সঙ্গে মিলিয়ে কিনছেন ধুতিও।
রামগঞ্জ থানার ওসি মোঃ এমদাদুল হক জানান, পূজাকে সামনে রেখে মার্কেটগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। চুরি ও ছিনতাইরোধে মার্কেটগুলোতে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। যাতে করে সনাতন ধর্মাবলম্বীর লোকেরা স্বাচ্ছন্দ্যে সুন্দরভাবে তাদের কেনাকাটা করতে পারে।
Leave a Reply