বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ‘ছাত্রদল’। সংগঠনটিকে বলা হয় বিএনপির পাওয়ার হাউজ। ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে সংগঠনটি। ছাত্রদলের বর্তমান নানা কার্যক্রম ও আন্দোলন-সংগ্রামের প্রস্তুতি নিয়ে বাংলার কন্ঠস্বর’র মুখোমুখি হয়েছিলেন সংগঠনের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলার কন্ঠস্বর’র নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলার কন্ঠস্বর: আন্দোলনের জন্য ছাত্রদল কতটুকু প্রস্তুত?
শ্রাবণ: বিএনপির অন্যতম প্রধান আন্দোলননির্ভর সংগঠন হচ্ছে ছাত্রদল। ৫ মাস আগে আমি আর জুয়েল (ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল) ছাত্রদলের দায়িত্ব পাই। ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগরকেন্দ্রিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কমিটি গঠন শেষ করেছি। কেন্দ্রীয় সংসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়েছে। আন্দোলনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে ৯০ শতাংশ হয়ে গেছে, বাকি ১০ শতাংশও শেষ হয়ে যাবে।
বাংলার কন্ঠস্বর: আন্দোলনে গেলে কোনো প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে কিনা। আসলে এসব মোকাবিলার জন্য কোনো প্রস্তুতি আছে?
শ্রাবণ: যে কোনো পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য প্রথমে মানসিক প্রস্তুতি আছে। তবে দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় নেই। ক্যাম্পাসগুলোতে সহাবস্থান নেই। অধিকাংশ নেতাকর্মী একাধিক মামলার আসামি, একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছে। নেতাকর্মী হামলা-মামলায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে। ছাত্রদল এখন আর হামলা-মামলা নিয়ে চিন্তিত না। মানসিকভাবে শতভাগ আত্মবিশ্বাসী। যে কোনো সময়ে বিএনপি আন্দোলনের ডাক দিলে ছাত্রদলের প্রত্যেক নেতাকর্মী শতভাগ দিয়ে দেশ ও দলের জন্য সর্বোচ্চটা দিতে প্রস্তুত। সংগঠনের নেতাকর্মীদের চিকিৎসা, আইনি সহযোগিতা করার জন্য ইন্টারনাল কমিটি থাকেই। ছাত্রদল বিএনপির সহযোগী সংগঠন। প্রত্যেকটা থানায় এবং জেলায় আমাদের মাদার সংগঠন বিএনপি আছে। জেলা ছাত্রদলকে সহযোগিতার জন্য কেন্দ্র জানালে সাথে সাথে আমরা সেই নেতাকর্মীর পাশে দাঁড়াই। আগাম জামিনের ক্ষেত্রে কেন্দ্র থেকে সহযোগিতা দিই। ইমারজেন্সি চিকিৎসার ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ঢাকায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করি।
বাংলার কন্ঠস্বর: ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার চারদিন পর ৩২ জনের পদ স্থগিত করা হয়েছে। কারণটা কী?
শ্রাবণ: আমরাই প্রথম মাত্র ৫ মাসের মধ্যে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করেছি। স্টেকহোল্ডারা ঢাকা শহরের কমিটিগুলোতে হস্তক্ষেপ করে। বিভিন্ন গ্রুপ, উপগ্রুপ আছে। তাদের সকলের চাওয়া-পাওয়া থাকে ঢাকা শহরের কমিটিগুলোতে। আমরা এই কমিটিগুলো ইতোমধ্যে শেষ করেছি। কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার পর কিছু অভিযোগ আসে। কেন্দ্রীয় কমিটি সবার জন্য সমান, স্বচ্ছ, জবাবদিহিতার আওতায় এবং আমাদের জবাবদিহি করতে হয়। এই আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গাটা নেতাকর্মীদের কাছে তুলে ধরার জন্য অভিযোগের ভিত্তিতে ৩২ জনের পদ স্থগিত করা হয়েছে। অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল ভাইকে। তদন্ত শেষ পর্যায়ে। দুই-চার দিনের মধ্যে তিনি রিপোর্ট দেবেন। অভিযোগ প্রমাণ হলে নিয়ম অনুনয়ী তাদের সাজা হবে। অভিযোগ প্রমাণ না হলে তাদের পদ সসম্মানে ফিরিয়ে দেয়া হবে। তবে মনে রাখতে হবে, অভিযোগ উত্থাপিত মানেই প্রমাণিত না। তারপরও যেহেতু অভিযোগ আসছে, অভিযোগের কারণে যারা ক্ষুদ্ধ তাদের আশ্বস্ত করার জন্য সাথে সাথে এই পদগুলো স্থগিত করেছি।
বাংলার কন্ঠস্বর: কয়েকদিন পর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্রদল বাধার মুখে পড়ে। ক্যাম্পাস নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা আছে কি?
শ্রাবণ: জাতীয় রাজনীতির বেশিভাগ প্রেক্ষাপট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয়। আমাদের কেন্দ্রীয় সংসদের কমিটি হওয়ার পর আমরা ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম। ছাত্রলীগ কয়েকদিন আমাদের বাধা দিয়েছে। একদিন ছাত্রদলও প্রতিরোধ করে। সে ঘটনায় দুই দলেরও অনেক নেতাকর্মী আহত হয়। তখন কিন্তু ছাত্রলীগ বারবার বলার চেষ্টা করেছে যে ছাত্রদল সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে, বহিরাগত এনে ছাত্রলীগের উপর হামলা করেছে।
কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রোক্টরের দাওয়াতেই ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটি ক্যাম্পাসে যায়। শুধুমাত্র ঢাবির ছাত্রদলের কমিটির সদস্যদের যাওয়ার কথা ছিল। আমরাও তাদেরকেই পাঠাই। তারা ফুল ও মিষ্টি নিয়ে যায়। ছাত্রদলের মুষ্টিমেয় কয়েকজন দেখে সুযোগ বুঝে হামলা করে ছাত্রলীগ। ভিসির দাওয়াতের পারও যে হামলা হবে, এটা আমরা বুঝতে পারিনি। আমরা যদি বুঝতে পারতাম ঢাবি প্রশাসন ছাত্রদলের নিরাপত্তা দিতে পারবে না তাহলে ছাত্রদল নিজেদের নিরাপত্তা নিজেরা নিয়েই ক্যাম্পাসে যেত।
আমরা ভিসি ও প্রোক্টরকে বারবার বলার চেষ্টা করেছি দোষীদের আইনের আওতায় আনেন। অন্যথায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যে সাংগাঠনিক সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার, তা নেয়া হবে। সে ক্ষেত্রে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি যদি আরো খারাপ হয় তার দায়ভারও ভিসি ও প্রোক্টরকে নিতে হবে। ছাত্রদল নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে আগামীতে যেভাবে ক্যাম্পাসে যাওয়া দরকার সেইভাবেই যাবে।
বাংলার কন্ঠস্বর: আপনারা বলেছেন, ক্যাম্পাসগুলোতে রাজনৈতিক সহবস্থান নেই। বিএনপি যদি ক্ষমতায় যায়, তাহলে কি সহবস্থান ফিরে আসবে?
শ্রাবণ: বিএনপির ক্ষমতার শেষ দিকে আমি ক্যাম্পাসে আসি। তখন অধিকাংশ হলে সহবস্থান ছিলো। বিএনপি ক্ষমতায় আসার প্রথম বছরে সহবস্থান ছিলো না। স্বাভাবিকভাবে একটা দল ক্ষমতায় আসার পর তিন-চার মাস ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে না। পরর্বতীতে তারেক রহমানের সরাসরি হস্তক্ষেপে ছাত্রলীগকে সহবস্থান দেয়া হয়।
Leave a Reply